সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে নিরাপদ পানি পাচ্ছে রাজশাহীর গ্রামীণ জনগণ

সংবাদ সারাদেশ ঃ রাজশাহী, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে খরা-প্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলসহ এই অঞ্চলে স্বল্প আয়ের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) গত প্রায় ১৫ বছরে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করেছে।
ডিপিএইচই-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বাদশা মিয়া বলেন, তারা ‘রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভূগর্ভস্থ নি¤œ পানি-স্তর এলাকায় কমিউনিটি-ভিত্তিক পানি সরবরাহ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন- যার ফলে প্রায় ১.৭৩ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছে। প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রায় ৩২ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন বছরের এ প্রকল্পটি তিনটি জেলার ১২টি উপজেলার ৫৯টি ইউনিয়নে বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকৌশলী বাদশা মিয়া বলেন, সাধারণ মানুষের নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে প্রায় ৯৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বিভাগের বিভিন্ন জেলা সদর ও উপজেলায় আরও ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রকল্পটির অধীনে ১০,৫৫০টি অগভীর তারা পাম্প, ২,৪৮৫টি পরিবর্তিত তারা পাম্প, ২,০৭৩টি অগভীর নলকূপ, ৫৪১টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ইউনিট, ১৮৪টি রিং-ওয়েল ও ৩৩টি পাবলিক টয়লেট স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
পল্লী পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধীনে ১,৩৯৫টি অগভীর তারা পাম্প, ২৭৭টি অগভীর নলকূপ, ১১০টি সাবমারসিবল পাম্পসহ নলকূপ ও আরো অন্যান্য পানি সরবরাহের অবকাঠামো স্থাপন করা হয়েছিল।এছাড়াও জাতীয় স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় ৪ হাজার ৮০৮টি স্যানিটারি ল্যাট্রিন ও সাতটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে।প্রয়োজন ভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ছয়টি পুকুরের পুনঃখনন ও সংস্কারের পাশাপাশি ৪৫৬টি ওয়াশ-ব্লক ও ৬৯টি পানির উৎস স্থাপন করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পৌরসভায় ৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন, দুটি জলাধার, আটটি নলকূপ ও চারটি উৎপাদন পাম্প স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
উপজেলা সদর ও গ্রোথ সেন্টারে অবস্থিত পৌরসভাগুলোতে পানি সরবরাহ ও পরিবেশগত স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় ১৫.১৫ কিলোমিটার পাইপলাইন ও চারটি পাম্প হাউস স্থাপনের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়।
প্র্রকৌশলী মিয়া বলেন, তারা বিভিন্ন জেলা শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ২৩ কিলোমিটার পাইপলাইন ও একটি পানি পরিশোধন কেন্দ্র নির্মাণ ও স্থাপন করেছেন। যেসব এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কম, সেখানে কমিউনিটি লেভেলের ৪৫২টি সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। সাবমারসিবল পাম্প এখানকার খরা-প্রবণ বরেন্দ্র এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এগুলো জাতিগত সংখ্যালঘুসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ পানীয় পানি সরবরাহ করছে।
বর্তমান সরকারের প্রথম পাঁচ বছরের মেয়াদে প্রায় ১৬৩.৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি বড় প্রকল্প- ‘বিশেষ গ্রামীণ পানি সরবরাহ’ এবং ‘জিওবি ইউনিসেফ’- সম্পন্ন হয়েছিল। ১৮.৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১,৪০২টি অগভীর নলকূপ, ৬.১৯২টি অগভীর তারা টিউবওয়েল, ৩,৯০১টি রূপান্তরিত তারা পাম্প, ১,১০২টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্লান্ট, ১৩১টি রিং-ওয়েল এবং ১৬টি পাবলিক টয়লেট স্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। পল্লী এলাকায় ১.৩৮ কোটি টাকার পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধীনে, ৫১৮টি রূপান্তরিত তারা পাম্প, ১৪৮টি অগভীর তারা পাম্প ও একটি সৌর শক্তি চালিত পাম্প চালু করা হয়েছিল।
এছাড়াও ০.৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় স্যানিটেশন প্রকল্পের ছয়টি কমিউনিটি টয়লেট ও ৯০০ সেট স্বল্পমূল্যের স্যানিটারি ল্যাট্রিন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের পক্ষ থেকে ৫০৪টি সাবমারসিবল পাম্প, অগভীর নলকূপসহ ৫৫১টি সাবমারসিবল পাম্প, ৩৯২টি ওয়াশ ব্লক ও ১০৭টি শ্যালো পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় ৫০টি অগভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২৫ কিলোমিটার পাইপলাইন, চারটি প্রোডাকশন পাম্প, তিনটি পাম্প হাউস ও একটি পানি পরিশোধন প্ল্যান্টও জলের নীচে স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য ৯০০ টিরও বেশি পরিবার পানি পাচ্ছে। 
সিরাজগঞ্জ পৌরসভায় ১০ কোটি টাকার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় একটি ৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন, দুটি জলাধার, আটটি নলকূপ, চারটি প্রোডাকশন পাম্প, চারটি পাম্প হাউস ও চারটি বিদ্যুৎ সংযোগসহ ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *