রাজনীতি ডেস্ক ঃগত দেড় মাসে বিএনপির ৫৪৫ জন নেতাকর্মী দণ্ডিত হয়েছেন। পুলিশের ওপর হামলা, কর্তব্য কাজে বাধাদান, ককটেল বিস্ফোরণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, নাশকতার চেষ্টাসহ নানা অভিযোগে করা ৩০টি মামলার বিচার শেষে এসব রায় দিয়েছেন ঢাকার পৃথক আদালত। তাদের দেড় থেকে সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত সাজা দেওয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ৫৩০ জনই পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অপর ১৫ নেতাকর্মী কারাগারে সাজাভোগ করছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিচার শেষ হওয়া এসব মামলা ৮ থেকে ১০ বছর আগে করা। বেশিরভাগ মামলাই পুলিশ বাদী হয়ে করে। দীর্ঘ সময় ধরে এসব মামলার বিচার আটকে ছিল। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের এক নির্দেশনার আলোকে এসব পুরোনো মামলার বিচার দ্রুত শেষ করছেন বিচারিক আদালতগুলো।শুধু রাজধানীতেই নয়, দেশের অনেক জেলা আদালত থেকেও সম্প্রতি এ ধরনের বেশ কিছু নাশকতা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলাসহ পৃথক ফৌজদারি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ শতাধিক নেতাকর্মীর সাজা হয়েছে। পলাতক সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানও রয়েছেন।
এদের বেশিরভাগ আসামিই রয়েছেন জামিনে। কিছু আছেন কারাগারে। দণ্ডপ্রাপ্তরা সংবিধান অনুযায়ী আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। একই কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেননি দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অনেকেই।খালেদা জিয়া ছাড়াও দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে যারা দণ্ডিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন-ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। তারা দুজনেই এখন পলাতক। সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও তার ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন, কুমিল্লার সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, সাবেক ড্যাব নেতা ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমান ও তার স্ত্রী সাবেরা আমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাতক্ষীরার সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, জামালপুরের সাবেক এমপি রাশিদুজ্জামান মিল্লাত, মাগুরার সাবেক এমপি ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, ভোলার সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম, খাগড়াছড়ির সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূঁইয়া, চট্টগ্রামের সাবেক এমপি গিয়াস কাদের চৌধুরীসহ আরও অনেকে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানের ৬৬(২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কেউ নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষীসাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে তিনি কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
সর্বশেষ ২০১৮-তে দণ্ডপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগের দাবিতে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন। তাদের আবেদন শুনে একই বছরের ২৭ নভেম্বর আপিল বিভাগ বলেছিলেন, আপিল বিচারাধীন থাকলেও বিচারিক আদালতে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্তরা যতক্ষণ পর্যন্ত উচ্চ আদালত থেকে খালাস না পাবেন এবং উচ্চ আদালত সাজা স্থগিত না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত দণ্ডিত কারও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকবে না।