নলডাঙ্গায় বাড়ির আঙ্গিনা ও পতিত জমিতে সবজি উৎপাদনে বিনামূল্যে বীজ পেলো ২০০ নারী

নিজস্ব প্রতিনিধি  :বাড়ির আঙ্গিনা ও আশপাশের পতিত জমিতে সবজি উৎপাদনে উৎসাহিত করতে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় গ্রামীণ ২০০ জন নারীকে বিনামূল্যে ৫ প্রকারের সবজি বীজ দিয়েছেন কৃষি বিভাগ।

এছাড়া সরকারী বিভিন্ন খালের পাড়, আশ্রয়ন প্রকল্পের সুবিধাভোগী, এতিমখানা ও মাদ্রাসায় অব্যবহৃত জায়গায় সবজি উৎপাদন ও সুবিধাভোগীদের অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বি করতে বিনা মুল্যে বীজ প্রদান করা হচ্ছে।

রোববার (০৯ জুলাই) বিকেলে উপজেলার মাধবপুর গ্রামে ৫০ জন নারীর হাতে এসব বীজ তুলে দেন উপজেলা কৃষি অফিসার ফৌজিয়া ফেরদৌস। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কিশোয়ার হোসেন, সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান ওসমানী, গণমাধ্যমকর্মী মামুনুর রশীদসহ স্থানীয় বিভিন্ন ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসারগণ । এরআগে বিভিন্ন সময়ে উপজেলার ছাতারভাগ গ্রামে ৫০ জন, দুর্লভপুর ও সাধনগর গ্রামে ১০০ জন নারীকে ১৩ প্রকারের সবজি বীজ প্রদান করা হয়। সবজি বীজের মধ্যে রয়েছে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, ডাটা, বরবটি, পুঁইশাক, গীমা কলমি, সিম, মুলা, লালশাক, করলা, শশা ও ঝিঙ্গে। বিতরনকৃত এসব সবজি বীজ কেউ কেউ রোপণ করছেন আবার অনেক আগেই বীজ রোপনের কারনে সবজি উৎপাদন শুরু হয়েছে। ফলে নিজেদের সবজির চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন।

ছাতারভাগ গ্রামের গৃহবধু স্বপ্না বেগম জানান, কৃষি বিভাগ থেকে পাওয়া বীজ নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনা ও চারিপাশে ডাটা, কলমি শাক, লালশাক ও করলা চাষ করেছিলেন। সেখান থেকে উৎপাদিত সবজি নিজেদের সংসারের চাহিদা মিটিয়েছেন। পাশাপাশি প্রায় ২ দুই হাজার ৫০০ টাকার সবজি বাজারে বিক্রিও করেছেন। একই গ্রামের কলেজ ছাত্রী তানিয়া খাতুন জানান, কৃষি বিভাগ থেকে তাকে ১৩ প্রকারের বীজ দিয়েছিলেন। সেই বীজ থেকে কুমড়া, বরবটি, করলা, লাউ, ডাটার চাষাবাদ করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ৩ হাজার টাকার সবজি বাহিরে বিক্রি করেছেন।

খাজুরা ইউনিয়নের সাধনগর গ্রামের গৃহবধু রুমা বেগম জানান, কৃষি বিভাগের দেয়া সবজি বীজে তার খুব উপকার হয়েছে। যেখানে কোন দিন কোন ধরনের সবজি চাষাবাদ হতো না। সেখানে তিনি হরেক রকম সবজি চাষাবাদ করেছেন। পাশাপাশি নিজেরা খেয়েছেন এবং আশপাশের মানুষের মাঝে বিলিয়েছেন। কোন প্রকার সার ও কীটনাশক ছাড়াই তিনি এসব সবজি চাষাবাদ করেছেন। একই কথা জানালেন, সাধনগর গ্রামের অপর গৃহবধু রেনু আক্তার, দুর্লভপুর গ্রামের প্রিয়া খাতুন, আঙ্গুরী বেগম, খুশিমালা সহ আরো অনেকে।

নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার ফৌজিয়া ফেরদৌস জানান, প্রধানমন্ত্রীর অনুশাষণ অনুযায়ী তিনি এসব সবজি বীজ বিভিন্ন গ্রামের হত দরিদ্র নারী, মাদ্রাসা, এতিমখানা, আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগি ও বিভিন্ন খালের পরিত্যক্ত পাড়ে চাষাবাদে উৎসাহিত করতে বিনামূল্যে বিতরন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। ইতোমধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক হত দরিদ্র নারীকে সবজি বীজ দেয়া হয়েছে। তারা হরেক রকম সবজি চাষাবাদ করে সফল হয়েছেন। নিজেরা চাহিদা মিটিয়ে বাহিরে বিক্রি করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হয়েছেন। আরো ৫০ জন নারীকে বীজ প্রদান করা হলো। পর্যায়ক্রমে গ্রামে গ্রামে, মাদ্রাসা, এতিমখানা, আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগিদের বীজ প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশের কোথাও এক ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা রাখা যাবে না। তাই বাড়ির আঙ্গিনা, চারিপাশ, পরিত্যক্ত জমিতে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতেই কৃষি বিভাগের এই প্রয়াস। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের হত দরিদ্র নারীরা সাবলম্বী হবেন এবং খাদ্য চাহিদা মিটবে অনেকাংশে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *