শুক্রবার, ডিসেম্বর ৮, ২০২৩
spot_img
Homeঅন্যান্যস্বাস্থ বার্তাহাজারো নারীর প্রাণ বাঁচাচ্ছে ‘সায়েবাস মেথড’

হাজারো নারীর প্রাণ বাঁচাচ্ছে ‘সায়েবাস মেথড’

d299cc5075e771a7d39dd5f13ba8b7fd 62a6bee4e1270

অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার নারীদের প্রসব-পরবর্তী রক্তপাত বন্ধে উদ্ভাবন করেন ‘সায়েবাস মেথড’। এটি বিশ্বজুড়ে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। ফিস্টুলার বিনামূল্যে অপারেশনের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘মামস ইনস্টিটিউট অব ফিস্টুলা অ্যান্ড উইমেন্স হেলথ’। কাজই তাকে এনে দিয়েছে দেশ-বিদেশের বহু সম্মাননা। ২০২০ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেছেন তিনি। ২০১৮ সালে পেয়েছেন অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা। তাকে নিয়ে লিখেছেন—সৈয়দ তাওসিফ মোনাওয়ার। 

বাবার অনুপ্রেরণায় বেড়ে ওঠা মেয়েটিও বাবার মতো শিক্ষক হতে চাইতেন। কিন্তু বাবা চেয়েছিলেন মেয়ে চিকিত্সক হবে। তবে চিকিত্সক হয়েও তিনি দেশের হাজার হাজার চিকিত্সকের শিক্ষক হয়েছেন। ফলে অপূর্ণ থাকেনি শিক্ষকতার স্বাদ। ১৯৫৩ সালে চট্টগ্রামে নানিবাড়িতে ডা. সায়েবা আক্তারের জন্ম। পৈতৃক নিবাসও চট্টগ্রামে। তবে বাবার চাকরির সুবাদে টাঙ্গাইল জেলার করটিয়া সা’দত কলেজের ক্যাম্পাসেই সায়েবার শৈশব কেটেছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় যখন সরাসরি রোগীদের সংস্পর্শে আসেন, তখন তিনি উপলব্ধি করেন এই পেশার গভীরতা। সরাসরি মানুষের সেবা করার সুযোগ তাকে মুগ্ধ করে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ইন্টার্নশিপ শেষে কিছু দিন কাজ করেন। পরে ১৯৮২ সালে ‘অবসটেট্রিকস ও গাইনোকোলজি বিষয়ে এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে ২০০৬ সালে অবসর নেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কর্মকালকে শিখেছেন খুব অল্প সরঞ্জাম বা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সর্বোচ্চ সেবা দেওয়াটা। ন্যাশনাল ফিস্টুলা সেন্টারের উদ্যোগটাও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকেই শুরু করেন। ফিস্টুলা সেন্টার সরকারি উদ্যোগে এখনো পর্যন্ত পরিচালিত হচ্ছে। এটিকে নিজের আরেকটি সন্তান মনে করেন সায়েবা। ‘সায়েবাস মেথড’ সম্পর্কে বলেন, ‘এটি খুব সাধারণ চিকিত্সা পদ্ধতি। এই পদ্ধতির প্রধান উপকরণ কনডম—যা সব জায়গায় সহজে পাওয়া যায়। এই কনডমকে একটা টিউবে বেঁধে দিয়ে জরায়ুর ভেতর ঢুকিয়ে ফুলিয়ে দেওয়া হয়। এতে প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণ অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়।’ ২০১১ সালে যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ অব অবসটেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টের পক্ষ থেকে তাকে এই উদ্ভাবনের জন্য সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়। এখন এটি দেশে দেশে অনুসরণ করা হচ্ছে, পাশাপাশি পল্লী অঞ্চলের নারীদের জীবনরক্ষায়ও ব্যবহৃত হচ্ছে। এর আগে এ ধরনের চিকিত্সায় বিদেশে যে বেলুন ব্যবহার করা হতো তার দাম ছিল প্রায় ৩০০ ডলারের কাছাকাছি। অথচ সর্বোচ্চ ১০০ টাকা খরচ করেই ‘সায়েবাস মেথড’র কিটটি তৈরি করা যায়। ফিস্টুলার চিকিত্সায় কেন আগ্রহী হলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. সায়েবা আক্তার বলেন, ‘মেয়েদের অল্পবয়সে বিয়ে হলে তাদের একটি সন্তান ধারণ করার মতো শারীরিক সক্ষমতা থাকে না। তাদের বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে জেনিটাল অরগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এরপর প্রসাব-পায়খানায় নিয়ন্ত্রণ থাকে না। যখন-তখন তা ঝরতে থাকে, ফলে শরীরে দুর্গন্ধ হয়। এতে করে স্বামীরাও তাদের ছেড়ে চলে যায়। আমার হাসপাতালে এ ধরনের রোগীদের বিনামূল্যে চিকিত্সা দেওয়া হয়।’ নিজের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষীর সহায়তায় ‘২০১২ সালে ফিস্টুলা, প্র্যোলাপস, পেরিনিয়াল টিয়ারসহ আরো কিছু প্রসবজনিত জটিলতার চিকিত্সায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘মামস ইনস্টিটিউট অব ফিস্টুলা অ্যান্ড উইমেন্স হেলথ’। ২০ শঘ্যার এই হাসপাতালে রোগীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও আছে। ডা. সায়েবা আক্তারের স্বামী ডা. জাহাঙ্গীর কবির একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ। এই দম্পতির চার সন্তান জাকিয়া কবির, সারোয়াত জাহান কবির, মারগুব কবির ও সুমাইয়া কবির।

সায়েবা বলেন, ‘দুইজন পুরুষ মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, এক হলেন আমার বাবা, দুই স্বামী। সন্তানরাও আমার কাজের জায়গাটা উপলব্ধি করেছে, তারা আমাকে নিয়ে গর্ব অনুভব করে, যা আমাকে উত্সাহ দিয়েছে।’

শিক্ষকতা জীবনের প্রাপ্তি কথা বলতে গিয়ে ডা. সায়েবা আক্তার বলেন, ‘কেনিয়ার এক হাসপাতালে ‘সায়েবাস মেথডের প্রক্রিয়ায় এক চিকিত্সক ছয় নারীর জীবন বাঁচিয়েছিলেন। ওই চিকিত্সককেই এই পদ্ধতির আবিষ্কারক বলে প্রচার করা হয়। সায়েবার ছাত্র-ছাত্রীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি, বিষয়টি বিশ্ব গণমাধ্যম পর্যন্ত গড়ায় এবং সায়েবার কৃতিত্বের বিষয়টি বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি পায়।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত

সাম্প্রতিক মন্তব্য