সরকারি অস্ত্র চুরির রহস্য জানা যায়নি ৩ বছরেও

প্রতীকী ছবি

রাজধানীর শাহবাগ থানা থেকে দিনদুপুরে সরকারি অস্ত্র-গুলি চুরির পর তিন বছরেও এ ঘটনার রহস্যভেদ করতে পারেনি পুলিশ। কী কারণে এই চুরি, কে বা কারা এতে জড়িত, সেই অস্ত্রটি এখন কোথায়- এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানাই রয়ে গেছে। সিসিটিভি ফুটেজ, কিছু তথ্য-উপাত্ত, সন্দেহ ও অনুমানের ওপর ভিত্তি করে তদন্ত এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। তবে এতদিনেও সেই আগের তিমিরেই রয়ে গেছে ঘটনা।

২০১৯ সালের ৫ মে দুপুরে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে শাহবাগ থানা ভবনের দোতলায় বিশ্রাম কক্ষে ফেরেন এএসআই হিমাংশু সাহা। বিশ্রামের একপর্যায়ে তিনি দেখেন, তার পিস্তল ও দুটি ম্যাগাজিন নেই। অনেক খুঁজেও সেগুলোর সন্ধান মেলেনি। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় সবার আগে খবর প্রকাশ করে সমকাল।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।

রহস্যাবৃত ঘটনাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তখন এই মামলা তদারকির দায়িত্বে ছিলেন (বর্তমানে ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার) রাজীব আল মাসুদ। তিনি সমকালকে বলেন, নানা উপায়ে অস্ত্র-গুলি উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হয়। কিছু তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানও চালানো হয়েছে। তবে চুরি যাওয়া অস্ত্রের সন্ধান মেলেনি। একপর্যায়ে ডিবির দায়িত্বাধীন এলাকা পুনর্বিন্যাসের পর মামলাটি রমনা বিভাগে স্থানান্তর করা হয়।

ডিবি রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মিশু বিশ্বাস সমকালকে বলেন, মামলাটির তদন্তে এখনও কার্যকর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। চুরির সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, তা স্পষ্ট নয়। তবে সম্ভাব্য সবগুলো পথেই রহস্যভেদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

ডিবি সূত্র জানায়, ওই অস্ত্র চুরির কিছুদিন পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে এক দুর্বৃত্ত নিহত হয়। তার কাছে পাওয়া যায় দুটি আগ্নেয়াস্ত্র। এর মধ্যে একটি ছিল অবৈধ অস্ত্র, অন্যটি সরকারি কোনো বাহিনীর ব্যবহূত পিস্তল। প্রথমে ভাবা হয়েছিল সেটি শাহবাগ থানার চুরি যাওয়া অস্ত্র। তবে যাচাই করে দেখা যায় তা নয়। এদিকে অপরাধীরা সাধারণত অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্র চুরি করে না। তা ছাড়া পুলিশের কোনো ইউনিট থেকে অস্ত্র চুরি সহজসাধ্যও নয়। সেখানে নানারকম নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকে। ফলে ধরা পড়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। এরপরও থানা থেকে চুরির পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। চুরির সঙ্গে শাহবাগ থানার কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকতে পারেন বলেও সন্দেহ করেন তদন্ত সংশ্নিষ্ট এক কর্মকর্তা। তার ধারণা, ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে এএসআই হিমাংশুকে ফাঁসাতে সহকর্মীদের কেউ ওই অস্ত্র-গুলি সরিয়ে থাকতে পারেন।
তদন্ত সূত্র জানায়, শাহবাগ থানার বিশ্রামকক্ষের ভেতরে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় চুরির কোনো ছবি পাওয়া যায়নি। তবে বাইরের একটি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, থানার সাব-কন্ট্রোল রুমের পাশের রাস্তা দিয়ে সন্দেহভাজন এক যুবক এসে সোজা দোতলায় উঠে যান। ঢোকা ও বের
হওয়ার সময় তাকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে দেখা গেছে। তদন্ত সংশ্নিষ্টদের ধারণা, তিনিই অস্ত্র-গুলি চুরি করেন। সন্দেহভাজন এই যুবক কোনো উগ্রপন্থি কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকতে পারেন বলেও আশঙ্কা করা হয়।

মামলাটির প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার তৎকালীন এসআই মনজুর হোসেন জানান, সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়ায় ওই যুবককে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে আশাবাদী হয়েছিল পুলিশ। তবে শেষপর্যন্ত তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *