লালপুরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পাট চাষ উৎপাদন

লালপুর প্রতিনিধিঃ
নাটোরের লালপুরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পাট চাষ হলেও ফলন ও দাম কম হওয়ায় কৃষকরা হতাশায় পড়েছেন। লাভের আশায় অধিক খরচ করে পাট চাষ করে কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় দিশেহারা তাঁরা। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর লাভবান হওয়ায় পাটের আবাদে ঝুঁকেছেন কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৪২০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৯২০ হেক্টর বেশি। হেক্টর প্রতি ২ দশমিক ৪ মেক্ট্রিক টন হারে ১৭ হাজার ৮০৮ মেক্ট্রিক টন পাটের আঁশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ রবিবার (০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২) উপজেলার ভূঁইয়াপাড়া খলিশাডাঙ্গা নদী, মোহরকয়া কয়লারডহর পদ্মার পাড়, নছিরার বিল, সালামপুর, বোয়ালিয়াপাড়া বিল, নাওদাঁড়া, ময়না, নান্দ, ধানাইদহ, চাঁনপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা জমির পাট কাটা, জাগ দেওয়া, পাটকাঠি থেকে আঁশ ছাড়ানো, পাট শুকানোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নারী-পুরুষ-শিশুরাও হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করছেন। পাটচাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, এক বিঘা জমি তৈরিতে তিনবার চাষ, বীজ-সার ও কীটনাশক, নিড়ানি-পচির্যা, কাটা ও জাগ, পাট জাগ দিতে পুকুরভাড়া, আঁশ ছাড়ানো, পরিবহন খরচ, অন্যান্য মোট ১৯ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। জমি লিজ খরচ ৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। শ্রমিক নজিমুদ্দিন বলেন, প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরীতে ভোর ৬টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত কাজ করেন। এতে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও মজুরি বাড়েনি। দিনমজুর দুলাল প্রামানিক (৭০) বলেন, জমির আইল উঁচু করে বেঁধে পলিথিন বিছিয়ে সেখানে সেচ দিয়ে পাট জাগ দিয়েছেন। পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়ার জন্য কয়েক বার সেচ দিতে হয়েছে। এতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। গোপালপুর পৌরসভার সাবেক কমিশনার ও কৃষক সেলিম রেজা বলেন, কৃষকরা পাট চাষ করে বিপদে পড়েছেন। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় সোনালী আঁশে আগ্রহ হারাচ্ছেন। সেই সাথে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে শ্রমিকদের জীবনযাপনে নাভিশ্বাস উঠেছে। এ ক্ষেত্রে পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিতে ভূর্তকির দাবি জানান তিনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর অধিক খরা আর অনাবৃষ্টিতে পাটের উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেশি পড়েছে। পুকুর-ডোবা-নালায় পানি সংকটে যত্রতত্র পাট জাগ দেওয়ায় গুণগত মান ও রং ভালো না হওয়ায় কৃষকেরা দাম পাচ্ছেন না।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *