ইতিহাসের স্মারক

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর পর তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের একনিষ্ঠ সহচর যে চার জাতীয় নেতার নাম ইতিহাসে সগৌরব স্থান পেয়েছে— তাঁরা হলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামান। এই চার নেতা বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁর স্বাধীনতা অর্জনের সুদৃঢ় অঙ্গীকার ও স্থির লক্ষ্যকে সামনে রেখে যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও সময়োপযোগী নেতৃত্ব দিয়ে সেই স্বাধীনতা অর্জনকে সম্ভব করে তোলেন— তা ছিল আমাদের ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অধ্যায়। প্রকৃতপক্ষে গোটা বাঙালি জাতি তাদের দু-আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে আর কখনো এই মতো বীরোচিত সংগ্রামে সার্বভৌম স্বাধীনতা অর্জন করেনি। এই অনন্য গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী অন্যতম রাজনৈতিক নেতা এএইচএম কামারুজ্জামানের স্মৃতির প্রতি জাতির শ্রদ্ধাজ্ঞাপন এবং তাঁর জীবন, রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং চিন্তাচেতনা-দর্শনকে জাতির সামনে উপস্থাপনের লক্ষ্যে দুই খণ্ডে বৃহদাকারের স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান রিসার্চ ফাউন্ডেশন থেকে। এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ইতিহাস-মনস্কতার পরিচায়ক। এই বিশাল স্মারকগ্রন্থের বিষয় নির্বাচনের বৈচিত্র্য, প্রতুলতা এবং অনুপুঙ্খ বিন্যাস বিস্ময়কর। প্রথম খণ্ডের প্রথম অধ্যায়ে মহান জাতীয় নেতার জীবন-কথা, শিক্ষা, বিবাহ ও কর্ম নিয়ে ছয়টি প্রবন্ধ রয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলের রাজনৈতিক জীবনের ওপর বারোটি, তৃতীয় অধ্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে তাঁর কর্মতত্পরতা নিয়ে দশটি এবং অপরাপর সাতটি অধ্যায়ে প্রায় ১২০ জন লেখকের রচনা স্থান পেয়েছে ‘বাংলাদেশ আমল’, ‘১৯৭৫: আগস্ট ট্রাজেডি থেকে জেল হত্যা’ ও ‘নিবেদিত কবিতা’ বিষয়ে। সেইসঙ্গে শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামানের স্বরচিত কবিতা, তাঁর কবিতার ওপর সম্পাদক ড. তসিকুল ইসলাম রাজার আলোচনা ও শহিদের আলোকচিত্রসমূহ। দ্বিতীয় খণ্ডে স্থান পেয়েছে শহিদ কামারুজ্জামানের জীবন ও কর্মের ‘মূল্যায়ন’, ‘প্রতিবেদন’, বিভিন্ন কাগজের সম্পাদকীয়, চিঠিপত্র ও অভিমতসমূহ, সংবাদপত্রে প্রকাশিত জেলহত্যা ও বিচার প্রসঙ্গে লিখিত ও প্রকাশিত শতাধিক নিবন্ধ ও প্রতিবেদন এবং প্রাসঙ্গিক দলিলাদি। এইসব প্রতিবেদন, ছবি ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলি এতদিন ছিল অগ্রন্থিত ও বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো ছিটানো। দুই খণ্ডের দুই হাজার পৃষ্ঠার বইটি সব মিলিয়ে যোগ দিয়েছে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের মহান কর্মযজ্ঞে। বেশকিছু রচনা আছে এর মধ্যে—অত্যন্ত পরিশ্রমলব্ধ। এটা একটা আকর গ্রন্থ হয়েছে, যা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক ইতিহাসের একটা অংশের পরিপূর্ণতা দান করবে। তেমনি পূর্ব বাংলার বাঙালি মুসলমানের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাক্ষেত্রের নানা অগ্রগতির চিত্রও পরিস্ফুট হয়ে উঠবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *