২১ কোটি টাকা অনাদায়, প্রযোজকদের নামে মামলা

এফডিসি

এফডিসি

এফডিসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘এই সব ছবির প্রায় ৮০ ভাগ প্রযোজকের ঠিকানা আর পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা ঠিকানা পরিবর্তন করে ফেলেছেন। অনেকবার আমরা টাকা পরিশোধের চিঠি দিয়েছি, হয় চিঠি ফেরত এসেছে, আবার অনেকে পেলেও তাঁর কোনো উত্তর দেননি। এসব পাওনা টাকা সরকারের। এ কারণে আমরা আদালতে যেতে বাধ্য হয়েছি। আমরা এসব দেনাদার প্রযোজককে যাচাই-বাছাই করে দেখেছি, যাঁদের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায় করা সম্ভব হবে, আপাতত তাঁদের নামেই মামলা করেছি, করছি। আরও মামলা হবে। এটি চলমান একটি প্রক্রিয়া।’এফডিসির হিসাব কর্মকর্তা হেমায়েত হোসেন বলেন, ‘বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য পর্যায়ক্রমে ছবির প্রযোজকদের কাছে অনেকবার চিঠি দিয়েছি। কারও ঠিকানা ভুল, কেউ কেউ ঠিকানা পাল্টে ফেলেছেন। আবার কোনো কোনো প্রযোজক মারাও গেছেন। এ কারণে চিঠি ফেরত এসেছে। আবার কেউ কেউ চিঠি পেলেও জবাব দেননি। কোটি কোটি টাকা অনাদায়ের কারণে এফডিসি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে সরকারের এসব টাকা উদ্ধার করতে আমাদের আদালতে যেতে হয়েছে, হচ্ছে।’এদিকে প্রযোজকদের বক্তব্য, এফডিসি টাকা পাবে, ঠিক আছে। কিন্তু নির্মাণাধীন এসব ছবিতে তাঁদেরও লাখ লাখ টাকা আটকে আছে। নির্মাণাধীন ছবিগুলোর বাকি কাজ এখন আর শেষ করার কোনো পরিবেশ নেই। শুটিংয়ের বাকি অংশ আর কোনোভাবেই মেলানো যাবে না। আগে যা খরচ হয়েছে, তা একেবারেই জলে চলে গেছে। আর ৩৫ মিলিমিটারে তৈরি যেসব ছবি সেন্সরে আছে, সেগুলো নিয়েও এগোনো সম্ভব নয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সরকারের অনুদানের একাত্তরের মা জননী ছবির ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৪১৭ টাকা বকেয়া বাবদ প্রযোজক ও পরিচালক শাহ আলম কিরণের নামে ২০১৬ সালে চেক প্রতারণার মামলা হয়। মামলাটি এখনো চলমান। মামলার ব্যাপারে ছবির প্রযোজক বলেন, ‘মামলা হয়েছে। অনুদানের সময় শর্ত ছিল, এফডিসি থেকে ছয়টি প্রিন্ট করতে হবে। আমি থার্টি ফাইভে শুট করেছিলাম। পরে ভারত থেকে ডিজিটালে রূপান্তর করে ছবিটি মুক্তি দিয়েছি। মুক্তির আগে এফডিসির ছাড়পত্র নিতে এফডিসির ছয়টি প্রিন্টের খরচ বাবদ একটি চেক দিয়েছিলাম। সেই চেক ডিজঅনার হয়েছে। তবে মামলা হওয়ার পর আমি প্রায় চার লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। বাকি টাকা দিয়ে দেব। আমি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যমেই এটি শেষ করব।’গুলি, প্রোমোশনসহ তিন ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এইচআর ফিল্মের কাছে ছবির নির্মাণসহায়তা বাবদ এফডিসির ৩২ লাখ ৭০ হাজার ৭২৭ টাকা পাওনা। এফডিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০০৪ সাল থেকে টাকা পরিশোধের জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে অনেকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। মাত্র একবার উত্তর দিয়েছেন প্রযোজক। তবে টাকা পরিশোধ করেননি। এসব ছবির প্রযোজকের নামেও মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে ছবিগুলোর দুই প্রযোজকের একজন ও ছবিগুলোর পরিচালক শাহিন সুমন জানান, যখন ছবিগুলোর শুটিং চলছিল, তখন ছবির আরেক প্রযোজক দেশের বাইরে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে আর ছবিগুলোর কাজ শেষ করা হয়নি।বেশ কয়েকজন প্রযোজক জানিয়েছেন, আগের ফরম্যাটে করা সিনেমাগুলো এখন ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তর করতে আরও টাকা প্রয়োজন। তা ছাড়া এই সময়ে এসে পুরোনো ছবি শুধু মুক্তির প্রক্রিয়ায়ই যে খরচ হবে, তাই-ই উঠে আসার সম্ভাবনা নেই, নির্মাণের বিনিয়োগ ওঠা তো দূরের কথা। এসব কারণে বকেয়া টাকাও পরিশোধে আগ্রহ নেই তাঁদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *