সিংড়ায় ঐতিহ্য ধরে রেখেছে শেরকোল কুমার পাড়ার মৃৎশিল্পীরা

 

সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি:
নাটোরের সিংড়া উপজেলার শেরকোলের কুমারপাড়া গ্রামের মৃৎশিল্পীরা। মৃৎশিল্প গ্রাম হিসেবে সবার পরিচিত। আদিকাল থেকে এই দু’গ্রামে অন্তত অর্ধশতাধিক লোকজন মৃৎশিল্প তৈরি করে বাজারে বেচা-কেনা করত। তখনকার লোকজন বাড়ির নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করত এই মৃৎশিল্পের বিভিন্ন পণ্য। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় আদিকালের মৃৎশিল্পটি এখন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। তবুও বাপদাদার পেশা ধরে রেখেছে কুমারপাড়ার তাতীরা। বেশিরভাগ লোকজন মৃৎশিল্পের উপর নির্ভরশীল। দারিদ্র ও আর্থিক সহযোগিতার অভাব থাকা সত্বেও থেমে নাই কুমাররা। করোনাকালিন সময়ে ও সরকারী কোনো সহযোগিতা পায়নি অত্র এলাকার মৃৎশিল্পীরা।সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ওঠানে বসে হাঁড়ি, পাতিল তৈরি করছে মৃৎশিল্পীরা। বাড়ির নারীরা এসব কাজে সহযোগিতা করছে। মৃৎশিল্পীর কারিগর যারা এখনো এ পেশায় আছেন তারা হলেন, নরেশ পাল,সিরিশ পাল, নিরঞ্জন পাল, মনোরঞ্জন পাল, মদন পাল, দিশা রানী পাল, নব কুমার পাল,বিসনো কুমার পাল, সত্যন কুমার শ্রীকান্ত পাল, সুদিপ কুমার পাল, কাঞ্চন কুমার পাল।তারা জানান, সমাজে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগার কারণে এ শিল্পটি আজ ধ্বংসের পথে। কারণ একসময় এ মৃৎশিল্পের পণ্য সামগ্রীর গ্রামে-গঞ্জে বেশ চাহিদা ছিল। এখন এ শিল্পের তেমন আর চাহিদা নেই বললেই চলে। ফলে এ পেশায় থেকে সংসার চালানো খুব কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন মৃৎশিল্পীরা।কয়েকজন মৃৎশিল্পী বলেন, সকল মানুষের কাছে ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতীক মৃৎশিল্পটি। সময়ের যাত্রাকালে পিষ্ট হয়ে হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্প। তদস্থলে আধুনিক সরঞ্জামসহ প্লাস্টিক, স্টিল ও মেলামাইন সামগ্রীর ব্যবহার ব্যাপক হারে বাড়ছে। নানান প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে আমাদের কুমার সম্প্রদায় বংশ পরম্পরায় এ শিল্পকে আজও টিকিয়ে রেখেছেন। রান্না করার হাঁড়ি ও গৃহস্থালির নানা কাজে ব্যবহার হত মৃৎশিল্প। বিভিন্ন ধরনের সৌখিন সামগ্রী হিসেবে তাদের গৃহে শোভা পেত মাটির তৈরি মনোমুগ্ধকর শিল্পটি। বর্তমানে প্লাস্টিক, সিরামিকের প্রতিযোগিতার বাজারে মৃৎশিল্পটি হার মানতে বসেছে। প্রায় ২০ বছর আগে মাটির তৈরি থালা-বাসন, হাঁড়িসহ নানান সামগ্রী ব্যবহার করত লোকজন। কিন্তু সেখানে আজ হাতেগোণা কয়েকটি সৌখিন শিল্পকর্ম গৃহে শোভা পাচ্ছে। কুমার পাড়ার ২০/৩০ জন লোকজন জড়িত এ পেশায়। মৃৎশিল্পরা সরকারী ও বেসরকারী সেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেন। প্রকৃত উদ্দোক্তা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানান তারা। সহযোগিতা পেলেই এই মৃৎশিল্পটি বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব বলে জানিয়েছেন। সৌখিন এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে মৃৎশিল্পের ব্যবহার অপরিহার্য মনে করেন শিল্পীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *