যুক্তরাষ্ট্র-চীন কি যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে

তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাইওয়ানের বিষয়ে চীনকে সতর্ক করার কয়েক সপ্তাহ পর বেইজিং এ যাবৎকালের সবচেয়ে কড়া ভাষায় তার প্রতিবাদ করেছে। চীন বলছে, তাইওয়ানের স্বাধীনতার ‘যে কোনো প্রচেষ্টা দৃঢ়তার সঙ্গে চুরমার করে দেবে’ দেশটি। দুই পক্ষের এ কথার লড়াই শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে গড়াবে কিনা, তা-ই এখন দেখার বিষয়।গত রোববার সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এশীয় নিরাপত্তা সম্মেলন শাংরি-লা ডায়ালগ-এ চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি মূলত দ্বীপের স্বাধীনতাকে সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, ওয়াশিংটন ‘তাইওয়ানের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করছে’ এবং চীনের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। আমাকে বিষয়টি স্পষ্ট করতে দিন, কেউ যদি তাইওয়ানকে চীন থেকে আলাদা করতে চায়, আমরা যুদ্ধ করতে দ্বিধা করব না।তাইওয়ান নিজেদের সার্বভৌম জাতি হিসেবে মনে করে। তবে দ্বীপটিকে নিজের অংশ বলেই দাবি করে আসছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের সবচেয়ে বড় মিত্র মনে করে তাইওয়ান। দ্বীপটির আত্মরক্ষায় সহযোগিতা প্রদান নিয়ে ওয়াশিংটনের একটি আইনও রয়েছে।সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় এ কথার লড়াই শুরু হয়েছে। তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে যুদ্ধবিমান পাঠানো বাড়িয়েছে চীন। গত মাসে চলতি বছরের সবচেয়ে বড় যুদ্ধবিমান বহরটি পাঠিয়েছিল দেশটি। এদিকে, তাইওয়ানের জলসীমায় নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চীন তাইওয়ানে আগ্রাসন চালালে যুদ্ধ শুরু হবে, এটাই বড় দুশ্চিন্তা। অতীতে বেইজিং বলেছে, প্রয়োজনে দেশটি শক্তি প্রয়োগ করে দ্বীপটি দখলে নেবে। তবে বিশ্নেষকরা বলছেন, এখনই তেমন কিছু হচ্ছে না।তাইওয়ানে আগ্রাসন চালিয়ে সফল হওয়ার মতো সামরিক সামর্থ্য চীনের আছে কিনা, এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। নিজেদের আকাশ ও সমুদ্র প্রতিরক্ষা তাইওয়ান লক্ষণীয়ভাবে বাড়িয়ে চলেছে।
অবশ্য অনেকেই এ বিষয়ে একমত, তাইওয়ানে আগ্রাসন চালানোর মতো পদক্ষেপের মূল্য যে অনেক চড়া এবং ধ্বংসাত্মক হবে, বেইজিং তা স্বীকার করে নিয়েছে। আর তা কেবল চীনের জন্যই নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্যও।ইনস্টিটিউট অব সাউথইস্ট এশিয়ান স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো উইলিয়াম চোং বলেন, অনেক বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য আছে, কিন্তু তাইওয়ানে আক্রমণ চালাতে চাইলে চীনাদের খুব সাবধানে সেই ব্যবধানটা মাথায় রাখতে হবে; বিশেষ করে ইউক্রেন সংকটের কাছাকাছি। চীনের অর্থনীতি রাশিয়ার তুলনায় বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে অনেক বেশি আন্তঃসংযুক্ত।এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের রিসার্চ ফেলো কলিন কোহ বলেন, তাইওয়ান ইস্যুতে উভয় পক্ষই তাদের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে অটল। এ বিষয়ে তাদের শক্ত অবস্থান দেখাতে হবে, যাতে মনে না হয় তারা সরে যাচ্ছে কিংবা পিছু হটছে।ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের চীন বিশেষজ্ঞ ইয়ান চং বলেন, তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীকে হতোদ্যম করে দিতে ও ধৈর্য পরীক্ষায় চীন তার জবরদস্তিমূলক কর্মকা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে আরও যুদ্ধবিমান পাঠানো কিংবা বিভ্রান্তমূলক প্রচারণার কাজটি করতে পারে। সবচেয়ে ভালো দিক হলো, কোনো পক্ষই উত্তেজনা বাড়াতে ইচ্ছুক নয়। কিন্তু উত্তেজনা না বাড়ানোর মানে এই নয় যে আমরা একটি ভালো অবস্থানের দিকে যাচ্ছি। তাই কিছু সময়ের জন্য আমরা এই অবস্থার মধ্যেই আটকে থাকছি।এদিকে, তাইওয়ান প্রণালি চীনের এবং বেইজিং সেখানে তার সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগ করবে। চীনের এ হুঁশিয়ারির পর পাল্টা জবাবে তাইপে বলেছে, কৌশলগত ওই প্রণালিটি একটি আন্তর্জাতিক জলপথ এবং এর মধ্য দিয়ে মার্কিন জাহাজ চলাচলের অধিকারকে তাইওয়ান সরকার সমর্থন করে। গতকাল মঙ্গলবার তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ বক্তব্যে ওই অঞ্চলের উত্তেজনা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রণালিটি দিয়ে নিয়মিতই যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ, এমনকি কখনও কখনও তাদের মিত্র কানাডা ও যুক্তরাজ্যের জাহাজও দেখা যাচ্ছে। এসব নৌযানের উপস্থিতি বেইজিংয়ের ক্ষোভও বাড়িয়ে তুলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *