চলতি আমন মৌসুমের জন্য দেশে সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বাড়লেও সরকার আপাতত দাম বাড়াচ্ছে না। তবে আমনের পর বোরো মৌসুমে ধান ও সবজির জন্য সার নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা আছে। এত দিন সরকার শীত মৌসুমের ফসলের জন্য পটাশ-এমওপি এবং ইউরিয়া রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে আমদানি করত। ওই দুই দেশের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে সরকার এবার সার আনতে কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের দিকে ঝুঁকছে। বিশ্ববাজারে সারের দাম গত চার মাসে তিন গুণ বেড়ে গেছে। পরিস্থিতি সামলাতে সরকার এ বছর সারের সরবরাহ দেড় লাখ টন কমিয়ে ৬৬ লাখ টন করেছে। চলতি অর্থবছরে সরকারের হাতে সার আছে প্রায় ১৯ লাখ টন। এর মধ্যে আমনে লাগবে প্রায় ১০ লাখ টন। বাকি সার বোরো মৌসুমে লাগবে। ফলে বোরো মৌসুমে সারের জোগান নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে। জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের শিল্পকারখানার জন্য গ্যাস বেশি জরুরি। তাই সরকারি দুটি কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। ইউরিয়া সার আন্তর্জাতিক বাজারে সহজলভ্য। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আমরা কম দামে সার কেনার চেষ্টা করছি। আশা করছি, সার নিয়ে সমস্যা হবে না।’ আমাদের শিল্পকারখানার জন্য গ্যাস বেশি জরুরি। তাই সরকারি দুটি কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। ইউরিয়া সার আন্তর্জাতিক বাজারে সহজলভ্য। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আমরা কম দামে সার কেনার চেষ্টা করছি। আব্দুর রাজ্জাক, কৃষিমন্ত্রী চলতি অর্থবছরে ইউরিয়া সার লাগবে ২৬ লাখ টন। এর মধ্যে সরকারি কারখানাগুলোতে উৎপাদিত হয় ১০ লাখ টন। তবে গ্যাস–সংকটের কারণে সরকার এরই মধ্যে চট্টগ্রাম ও নরসিংদীর দুটি সার কারখানা বন্ধ রেখেছে। তাই চলতি মৌসুমে ইউরিয়া সারের জন্য সরকারকে বিশ্ববাজারে যেতে হবে। এরই মধ্যে সৌদি আরব থেকে সাড়ে চার লাখ ও কাতার থেকে সাড়ে চার লাখ টন সার আমদানির চুক্তি হয়েছে। বাকি সার সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা হবে। দেশের পটাশ সারের চাহিদার ৬০ শতাংশ বেলারুশ ও রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয়। ওই দুই দেশের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিকল্প হিসেবে কানাডা থেকে চার লাখ টন পটাশ সার আমদানির একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। চুক্তির আওতায় আগামী সেপ্টেম্বরে দুই দফায় এক লাখ টন সার দেশে আসছে। আর টিএসপি সারের একটি অংশ আনা হতো রাশিয়া থেকে। এখন তা জর্ডান, তিউনিসিয়া, মরক্কো ও ওমান থেকে আমদানির কথা চলছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালের মে মাসের তুলনায় ২০২২ সালের মে মাসে ডিএপি ৪৭ শতাংশ, এমওপি ১৭৭ শতাংশ ও টিএসপি ৫৭ শতাংশ দাম বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার প্রস্তাবিত বাজেটে সারের ভর্তুকি চার হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। গত অর্থবছরের বাজেটে সারে ভর্তুকি রাখা হয়েছিল সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বজুড়ে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বছর শেষে তা ১২ হাজার কোটি টাকা দাঁড়ায়। মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এবার ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। ‘আমন মৌসুমে প্রয়োজনীয় সারের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হবে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে। ওই সার আমাদের কাছে আছে। তবে বোরোর জন্য সারের জোগান দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য সরকারি সার কারখানাগুলোকে আরও আধুনিকায়ন করতে হবে।’ কামরুল আশরাফ খান, বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে প্রতি কেজি ইউরিয়াতে ৮২ টাকা, টিএসপিতে ৫০ টাকা, এমওপিতে ৪১ টাকা এবং ডিএপিতে ৭৯ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। এতে ৯৬ টাকা কেজির ইউরিয়া ১৬ টাকায়, ৭০ টাকার টিএসপি ২২ টাকায়, ৫৪ টাকার এমওপি ১৫ টাকায় এবং ৯৩ টাকার ডিএপি ১৬ টাকায় কৃষক পাচ্ছে। বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল আশরাফ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমন মৌসুমে প্রয়োজনীয় সারের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হবে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে। ওই সার আমাদের কাছে আছে। তবে বোরোর জন্য সারের জোগান দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য সরকারি সার কারখানাগুলোকে আরও আধুনিকায়ন করতে হবে।’