চা সংসদের সংবাদ সম্মেলন
গত ১০ বছরে চায়ের পাইকারি দাম বেড়েছে মাত্র দশমিক ১৬ শতাংশ। আর শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে ৭৩ দশমিক ৯১ এবং অন্যান্য খরচ বেড়েছে ৪৮ শতাংশ।
চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ থেকে বৃদ্ধি করে ১৭০ টাকা করায় চা-শিল্প চাপে পড়বে বলে দাবি করেছেন চা-বাগানমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদের নেতারা। তাঁরা বলেন, ‘জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারণ করে দেওয়া মজুরি আমরা মেনে নিয়েছি। তবে মজুরি বৃদ্ধির কারণে চাপে পড়বে চা-শিল্প। চাপ সহ্য করে টিকে থাকতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোই একমাত্র পন্থা।’ এ জন্য সাধারণ শ্রমিক, শ্রমিকসংগঠনের নেতা ও সরকারের সহায়তা চেয়েছেন তাঁরা।রাজধানীর গুলশানের পুলিশ প্লাজা কনকর্ড টাওয়ারে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ঢাকা কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশীয় চা সংসদের নেতারা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান এম শাহ আলম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চা সংসদের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সাইফুর রহমান, আরদাশীর কবির, এম ওয়াহিদুল হক, এইচ এস এম জিয়াউল আহসান, আলতামাশ হাসান, সালেক আহমেদ আবুল মাসরুর, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কামরান টি রহমান, মেট্রো চেম্বারের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির।মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে দিনে প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। তাতে তিন সপ্তাহের আন্দোলনে চা-বাগানগুলোর মোট ক্ষতির পরিমাণ ৪২০ কোটি টাকা।এম শাহ আলম, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশীয় চা সংসদসংবাদ সম্মেলন শেষে সংগঠনটির চেয়ারম্যান এম শাহ আলম বলেন, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে দিনে প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। তাতে তিন সপ্তাহের আন্দোলনে চা-বাগানগুলোর মোট ক্ষতির পরিমাণ ৪২০ কোটি টাকা। আন্দোলনের কারণে চলতি বছর চায়ের উৎপাদন কিছুটা কমবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।সংবাদ সম্মেলনে চা সংসদের নেতারা বলেন, বর্তমানে নগদ পারিশ্রমিকসহ অন্যান্য সুবিধা মিলিয়ে একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকার ওপরে গিয়ে দাঁড়ায়। মজুরি বৃদ্ধির আগে এর পরিমাণ ছিল ৪০০ টাকা। তাঁরা বলেন, প্রতি সপ্তাহে একজন শ্রমিককে ন্যূনতম ৮ কেজি করে চাল বা আটা রেশন হিসেবে দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যসংখ্যা বিবেচনায় সেটি সপ্তাহে ১৩ কেজি পর্যন্ত হয়। একজন শ্রমিক নামমাত্র মূল্য অর্থাৎ দুই টাকায় প্রতি কেজি চাল বা আটা পান। তাতে প্রতি মাসে একজন শ্রমিকের পরিবার গড়ে ৪২ কেজি পর্যন্ত রেশন পেয়ে থাকে।সংবাদ সম্মেলনে এম ওয়াহিদুল হক বলেন, চা-শ্রমিক ও তাঁর পুরো পরিবারের সবাই বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবাও পান। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরও সেই সুবিধা বহাল থাকে। এ ছাড়া ১৯৩৯ সাল থেকে শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ভাতা দেওয়া হয়। ১৯৭০-৭১ সাল থেকে নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের সমান মজুরি দেওয়া হয়।চা–বাগানমালিকেরা জানান, বাংলাদেশে চায়ের ফলন অত্যন্ত সন্তোষজনক। গত বছর দেশে উৎপাদিত চায়ের বার্ষিক মূল্যমান ছিল সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। প্রতি কেজি চা উৎপাদনে খরচ ২০২ টাকার মতো, সেখানে নিলামে দাম মিলেছে মাত্র ২০০ টাকা। গত ১০ বছরে চায়ের পাইকারি দাম বেড়েছে মাত্র দশমিক ১৬ শতাংশ। আর শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে ৭৩ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং অন্যান্য খরচ বেড়েছে ৪৮ শতাংশ।নিহাদ কবির বলেন, খরা মৌসুমে শ্রমিকেরা সব মিলিয়ে মাসে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা মজুরি পান। দৈনিক সর্বনিম্ন মজুরি মানে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হলেই শ্রমিক সেই টাকা পাবেন। বর্তমানে মজুরি বৃদ্ধির চাপ সহ্য করে টিকে থাকতে উৎপাদন বাড়াতে হবে।চা সংসদের সদস্য সাইফুর রহমান বলেন, ‘রাস্তার পাশে মানুষ ১০-২০ টাকায় এক কাপ চা খান। সেখান থেকে আমরা উৎপাদক, শ্রমিকসহ পুরো সরবরাহব্যবস্থা ৪০-৫০ পয়সার বেশি পাচ্ছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘চায়ের দামটা পাচ্ছি না বলেই আমরা শ্রমিকদের বাড়তি টাকা দিতে পারছি না। আমরা বাংলাদেশে থাকি। বাংলাদেশে চলি। ফলে বিদেশের সঙ্গে তুলনা করে লাভ নেই। আমরা অনেক কিছুতে পিছিয়ে আছি। তবে আমরা যথাসম্ভব উন্নতির চেষ্টা করছি।’মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনকালে শ্রমিকেরা মজুরি পাবেন কি না এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গিয়ে শ্রমিকের ওপর বাড়তি চাপ দেওয়া হবে কি না—সে বিষয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে চা সংসদের চেয়ারম্যান এম শাহ আলম বলেন, মজুরির বিষয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পদ্ধতি নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রমিকেরা আগের মতোই আট ঘণ্টা কাজ করবেন।