ভয়াবহ হচ্ছে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ

ডেস্ক খবরঃ
সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিরল রোগ মাঙ্কিপক্স ছড়িয়েছে। ইউরোপে এই পক্সে সংক্রমণ ‘ভয়াবহ’ আকার ধারণ করেছে। এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। জার্মানির কর্মকর্তারা এ অঞ্চলে মাঙ্কিপক্সের এই বিস্তারকে ‘এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড়’ সংক্রমণ বলে বর্ণনা করেছেন। খবর ডয়েচেভেলের। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, স্পেন, পর্তুগাল, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যসহ নানা দেশে বর্তমানে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে। শুক্রবার জার্মানির সশস্ত্র বাহিনীর মেডিকেল সার্ভিস সেদেশে প্রথম মাঙ্কিপক্স রোগী শনাক্ত করেছে। তারা বলছে, ‘যুক্তরাজ্য, স্পেন এবং পর্তুগালে মাঙ্কিপক্সের যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তা ইউরোপ অঞ্চলে এ রোগের সবচেয়ে ব্যাপক এবং বড় ধরনের সংক্রমণ।’ মাঙ্কিপক্স একটি বিরল ভাইরাস সংক্রমণ জনিত রোগ, যা পশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। সাধারণত এ রোগে শরীরে মৃদু উপসর্গ দেখা দেয় এবং আশার কথা হচ্ছে, অধিকাংশ মানুষ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠেন। প্রথম বানরের মধ্যে এ রোগ শনাক্ত হয়েছিল। ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থেকে সাধারণত এই রোগ ছড়ায় এবং আফ্রিকার বাইরে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা বিরল। সেকারণেই সম্প্রতি দেশে দেশে মাঙ্কিপক্সের বিস্তার উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইউরোপের দেশগুলোতে একশর বেশি মানুষের দেহে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের নিশ্চিত সংক্রমণ কিংবা রোগের উপসর্গ দেখা যাওয়ায় জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সাধারণত পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে এর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সর্বপ্রথম বানরের দেহে শনাক্ত হওয়া এ রোগটি ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় এবং এর আগে আফ্রিকার বাইরে দেখা যায়নি। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি ইউরোপে ধারাবাহিকভাবে এর সংক্রমণ ধরা পড়ায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ইউরোপে এযাবৎকালের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাব বলে জানিয়েছে জার্মানি। ইউরোপের অন্তত পাঁচটি দেশে এ রোগের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে। দেশগুলো হচ্ছে- যুক্তরাজ্য, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি এবং ইতালি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, এবং অস্ট্রলিয়াতেও রোগী শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের ঝুঁকির উল্লেখ করে বিশ্ববাসীর স্বাস্থ্যের জন্য এ ভাইরাস হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে জানিয়েছিল ‘স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল অ্যাডভাইসরি গ্রুপ অনন ইনফেকশাস হ্যাজার্ডস উইত প্যানডেমিক অ্যান্ড এপিডেমিক পোটেনশিয়াল (এসটিএজি-আইএইচ)’ । রয়টার্স জানায় এ বিষয়ে ওই গ্রুপটির সঙ্গে বৈঠকে বসবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি কমিটি। মাঙ্কিপক্স একটি বিরল ভাইরাস সংক্রমণজনিত রোগ। সাধারণত এ রোগে শরীরে মৃদু জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয় এবং অধিকাংশ মানুষ কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন বলে জানায় যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস। এ ভাইরাস সহজে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। গণ সংক্রমণের ঝুঁকিও খুব কম। সার্স-সিওভি-২ ভাইরাসের মতো এ ভাইরাস ছড়ায় না জানিয়ে বিজ্ঞানীরা এ রোগের প্রাদুর্ভাব কোভিড- ১৯ মহামারীর মতো হয়ে উঠবে না বলে মনে করছেন। জার্মানির রবার্ট কখ ইন্সটিটিউটের গবেষক ফাবিয়ান লিনদার্তজ মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাবকে আঞ্চলিক মহামারী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “এই মহামারী দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে রোগীকে খুব ভালভাবেই আলাদা করা সম্ভব এবং এ রোগের কার্যকর ওষুধ এবং টিকাও আছে। শুক্রবার জার্মানির সশস্ত্র বাহিনীর মেডিকেল সার্ভিস সেদেশে প্রথম মাঙ্কিপক্স রোগী শনাক্ত করেছে। তারা বলছে, “যুক্তরাজ্য, স্পেন এবং পর্তুগালে মাঙ্কিপক্সের যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তা ইউরোপ অঞ্চলে এ রোগের সবচেয়ে ব্যাপক এবং বড় ধরনের সংক্রমণ।” বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছেন মাঙ্কিপক্সের সুনির্দিষ্ট কোনো টিকা নেই,কিন্তু স্মলপক্সের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা টিকা এ রোগ ঠেকাতে ৮৫ শতাংশ কার্যকর। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য জানিয়েছে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে এমন স্বাস্থ্যকর্মীদের স্মলপক্সের টিকা দেওয়া হয়েছে। ১৯৭০ সালের পর থেকে আফ্রিকার ১১ দেশে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। ২০১৭ সালের পর নাইজেরিয়ায় এবার সবচেয়ে বেশি এ রোগের প্রকোপ দেখা গেছে। এবছর এখনও পর্যন্ত ৪৬ জনের দেহে উপসর্গ দেখা গেলেও ১৫ জনের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত ৭ মে প্রথম একজন ইউরোপীয়ের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। নাইজেরিয়া থেকে ওই ব্যক্তি ইংল্যান্ডে ফিরে এসেছিলেন। এরপর থেকে আফ্রিকার বাইরে ১০০ জনের সংক্রমণ নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে ইউনিভার্সিট অব অক্সফোর্ড একাডেমিক। রয়টার্স লিখেছে, শনাক্তদের বেশিরভাগেই আফ্রিকা ভ্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত নন। যে কারণে রোগের প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি অস্পষ্ট থেকে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, সামাজিক সংস্পর্শ থেকে এটা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাজ্যে এখন ২০ জন শনাক্ত রোগী রয়েছে। ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি জানিয়েছে, সম্প্রতি শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই পুরুষ যারা নিজেদের সমকামী, উভকামী কিংবা কোনা পুরুষের সঙ্গে যৌন সংসর্গের কথা জানিয়েছেন। পর্তুগালে সংক্রমিত ১৪ জনই শনাক্ত হয়েছেন বিভিন্ন যৌন চিকিৎসা কেন্দ্রে। তারাও পুরুষ এবং নিজেদের সমকামী, উভকামী অথবা অপর কোনো পুরুষের সঙ্গে যৌন সংসর্গের কথা জানিয়েছেন। স্পেনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার ২৩ জনের দেহে নতুন করে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই মাদ্রিদ এলাকার এবং বেশিরভাগ সংক্রমণের সঙ্গেই প্রাপ্ত বয়স্কদের একটি বাষ্পীয় স্নানাগারের সম্পর্ক রয়েছে। তবে ইতালির লাজিও অঞ্চলের স্বাস্থ্য কমিশনার আলেসিও ডি’আমাতো বলছেন, এ রোগকে যৌনবাহিত বলাটা বেশি আগাম হয়ে যাবে। দেশটিতে এখনও পর্যন্ত তিনজনের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে। লন্ডনের কিংস কলেজের ভাইরাসবিদ স্টুয়ার্ট নেইল জানান, সংজ্ঞা অনুযায়ী যৌন সংসর্গকে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শই বোঝায়। আমার মনে হয় এর সঙ্গে যৌনবাহিত সংক্রমণের ধারণা, এটা কিছুটা বাড়িয়ে বলা হয়ে যায় বলেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন জনের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ভাইরাসের জিন বিন্যাস করছেন। দ্রুতই এ বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *