বিআরটি প্রকল্পে নিরাপত্তা বেষ্টনী বসেনি, কাজ বন্ধ

প্রকল্পটি শুরু থেকেই ওই পথে চলাচলকারীদের ভোগাচ্ছে। উন্মুক্ত অবস্থায় কাজের কারণে ভয় নিয়ে চলাফেরা করতে হয় পথচারীদের।

বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের গার্ডার পড়ে রাজধানীর উত্তরায় পাঁচজন নিহতের ঘটনার পর এই প্রকল্পের কাজ ঘিরে নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়ার কথা থাকলেও সেই ব্যবস্থা এখনো করা হয়নি।প্রকল্পের গাজীপুরের শিববাড়ী থেকে টঙ্গী অংশ ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। এ পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে আছে প্রকল্পের কাজ।গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ঘুরে কোথাও প্রকল্পের কাজ চলতে দেখা যায়নি। তবে যেসব স্থানে প্রকল্পের মালামাল রয়েছে, সেসব জায়গায় কোথাও একজন, কোথাও দুইজন করে প্রহরী রাখা হয়েছে।ওই এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা বিষয়টি সমাধান করেছেন। গাজীপুরের টঙ্গী থেকে শিববাড়ী পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের সব নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। তবে এখন নিরাপত্তার জন্য যে কাজগুলো করা প্রয়োজন, সেগুলোর কাজ চলবে। নিরাপত্তাবেষ্টনী নিশ্চিত করেই কাজ শুরু করা হবে।মো. মহসিন, বিআরটি প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী বোর্ডবাজার এলাকায় কথা হয় নিরাপত্তাকর্মী আফজাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রকল্পের কোনো কাজ হচ্ছে না। সব জায়গায় কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। রাস্তার পাশ দিয়ে নিরাপত্তার জন্য টিনের বেড়া দেওয়া হবে, তারপর কাজ করা হবে।এর মধ্যে গত শুক্রবার বিআরটি প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করেন সেতু মন্ত্রণালয়ের মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী। এ সময় কয়েকটি স্থানে নির্মাণকাজের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ঘাটতির কথা জানান তিনি। সুরক্ষার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান সচিব। সেদিনের পর থেকে গাজীপুর এলাকায় প্রকল্পের কাজ একপ্রকার বন্ধ।এদিকে কাজ চলার সময় গত শুক্রবার বিআরটি প্রকল্প এলাকায় আবারও দুর্ঘটনা ঘটেছে। টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের ওপর থেকে বিশাল আকৃতির একটি রড চলন্ত একটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে। এতে অল্পের জন্য রক্ষা পান পাঁচজন যাত্রী। তবে প্রাইভেট কারটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে গেছে পেছনের দরজার কাচ। একটি রড গাড়িতে ঢুকে গেছে। ভেঙে গেছে পেছনের লাইট।ওই প্রাইভেট কার গাজীপুর মহানগরীর ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রশিদের। গাড়িতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা, দুই ছেলে রুমান হোসেন ও মো. রাফি এবং চালক সোহাগ মিয়া।ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আবদুর রশিদ বলেন, তাঁরা সপরিবার ঢাকার মিরপুর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাঁদের ব্যক্তিগত গাড়িতে গাজীপুর মহানগরীর গাছা এলাকার মালেকের বাড়ির বাসায় ফিরছিলেন।বেলা তিনটার দিকে টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় পৌঁছালে নির্মাণাধীন বিআরটি প্রকল্পের উড়ালসড়ক থেকে ২০-২৫ ফুট লম্বা একটি মোটা রড প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তাঁরা।খবর পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন উপস্থিত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন বলে জানান আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, বিআরটির কর্মকর্তারা বিষয়টি কাউকে না প্রকাশ করার অনুরোধ করেন। গাড়িটি মেরামত করতে ২০-২৫ হাজার টাকা লাগতে পারে। কিন্তু তাঁরা সাত হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন।ঘটনাটি শুনেছেন জানিয়ে বিআরটি প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী মো. মহসিন প্রথম আলোকে বলেন, ওই এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা বিষয়টি সমাধান করেছেন। গাজীপুরের টঙ্গী থেকে শিববাড়ী পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের সব নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। তবে এখন নিরাপত্তার জন্য যে কাজগুলো করা প্রয়োজন, সেগুলোর কাজ চলবে। নিরাপত্তাবেষ্টনী নিশ্চিত করেই কাজ শুরু করা হবে।এর আগে ১৫ আগস্ট বিকেলে উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে একটি প্রাইভেট কারের পাঁচ যাত্রীর প্রাণ যায়। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান এক নবদম্পতি। তাঁদের বউভাতের অনুষ্ঠান শেষ করে স্বজনেরা মিলে ওই প্রাইভেট কারে করে আশুলিয়ার বাসায় ফিরছিলেন। দুর্ঘটনাস্থলে কোনো নিরাপত্তাবেষ্টনী ছিল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *