উলিপুরে পুরোনো চাল চিকন ও পলিশ করে খাদ্যগুদামে সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে মিল ও চাতাল মালিকদের বিরুদ্ধে। এসব চাল ভিজিএফ কর্মসূচিতে সরবরাহ করা হলে জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ তোলার পর তা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন গুদাম কর্মকর্তা। উপজেলার ৭১টি হাসকিং মিল ও চাতাল চুক্তিবদ্ধ হয়েছে নতুন চাল দেওয়ার জন্য। কিন্তু মিল ও চাতাল বন্ধ থাকায় সিন্ডিকেট করে পুরোনো ও নিম্নমানের চাল গুদামে দিচ্ছে তারা। ইতোমধ্যে নিম্নমানের চাল পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বছর ৪০ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৪৭০ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে চুক্তিবদ্ধ মিল মালিকদের বড় একটি অংশ বাজার থেকে পুরোনো চাল সংগ্রহ করে চিকন ও পালিশ করে দিচ্ছে গুদামে। এসব চাতালের সিংহভাগের চুলায় দীর্ঘদিন আগুনও জ্বলেনি। গুদামের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ কয়েকটি চাতাল বিক্রি বা ভাড়া হয়ে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বন্ধ চাতাল চালু দেখিয়ে সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। সিন্ডিকেটের কয়েক নেতা ভিজিএফ, ভিজিডির চাল কম দামে কিনে চিকন করে গুদামে দিচ্ছেন। এ ছাড়া গত ৩০ জুন বিশেষ কাবিখা প্রকল্পের সাড়ে ৪০০ টন চালের (গমের পরিবর্তে) ডিও কিনে গুদাম থেকে না তুলেই কাগজপত্র হাতবদল করে সরবরাহ দেখিয়েছেন। এ কাজে তিনটি চালকলের মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন অরজিৎ চালকলের মালিক পার্থ সারথি সরকার বলেন, তিনি চাল দেননি। তবে খাদ্য ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তা দিয়েছে বলে শুনেছেন। এ বিষয়ে মোস্তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বজরা বাবুরহাট বাজারের মেসার্স কাশেম চালকল ও মেসার্স শাহিদা চালকলের মালিক মোছা. শাহিদা পারভিন জানান, তাঁদের নামে চাল সরবরাহের বরাদ্দ আছে। কিন্তু দেওয়া হয়েছে কিনা জানেন না। মেসার্স সৌমিক অ্যান্ড শীষ চালকলের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, চাতালে চাল উৎপাদন করে পোষায় না। তাই বিএম চালকলকে বরাদ্দ ছেড়ে দিয়েছেন। এখন অধিকাংশ চাতাল বন্ধ। দুর্গাপুর বাজারের ঊর্মি চালকল ও মেসার্স সরদার চালকলের মালিক আবেদ আলী জানান, অল্প বরাদ্দ থাকায় তিনি চাল কিনে দিয়েছেন। এখনও একটির বরাদ্দ দিতে পারেননি। মেসার্স মজুমদার চালকলের মালিক রতন কুমার মজুমদার বলেন, চাল উৎপাদনের উপকরণ, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি ও সংকটের কারণে এ ব্যবসা অলাভজনক। তাই বাজার থেকে কিনে দেওয়াই ভালো। লাভের জন্য নয়, মিল ও চাতাল চালু রাখতে এটি করেছেন। উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা মো. শাহিনুর রহমান বলেন, চালকলগুলো চিকন করে চাল দিলেও এর নিয়ম নেই। পৌর মেয়রকে ২৬ বস্তা চাল সরবরাহ করা হলে তিনি তা নিতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে তিন দিন নানা নাটকীয়তার পর পৌর মেয়র, এমপি, ইউএনও ও মিলারদের নিয়ে বৈঠকের পর চাল পরিবর্তন করা হয়েছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মিসবাউল হোসাইন বলেন, ঈদ সামনে থাকায় মেয়রের অভিযোগের ভিত্তিতে চাল পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার তদন্ত চলছে। মিলাররা পুরোনো চাল কিনে দিচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। এ অনিয়মের ব্যাপারে গুদাম কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছে। পৌর মেয়র মামুন সরকার মিঠু বলেন, যে চাল দেওয়া হয়েছিল সেগুলো ঈদের সময়ের ছিল। সবাই মিলে সমঝোতা করে পরে চাল বিতরণ হয়। ওই চালের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।