নাটোরে শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনায় আসামী কালু চেয়ারম্যানের জামিন না মঞ্জুর, কঠিন বিচারের দাবী এলাকাবাসীর

 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নাটোরে শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামী লক্ষীপুর-খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ওরফে কালু (৬০) এর জামিন না মঞ্জুর করেছে আদালত। বৃহষ্পতিবার আদালতে তোলা হলে জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট।
গত বুধবার (০৩ আগষ্ট) কমিটি গঠনের দ্বন্দের জেরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু ও তার ছেলেসহ আরও ১০/১৫জন নাটোর সদর উপজেলার হয়বতপুর গোলাম ইয়াছিনিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসায় প্রবেশ করে ইংরেজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাফর বরকতকে চেয়ারম্যানসহ সঙ্গীয় লোকজন মারধর করে, পরে মাদ্রাসা থেকে বের করে প্রকাশ্যে রাস্তা দিয়ে টেনে হিঁচড়ে ইউনিয়ন পরিষদের একটি রুমে আটকে রাখে ও মারধর করে। পরে নাটোর সদর থানার পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষক মো. জাফর বরকত (৫২) নিজে বাদী হয়ে ঐ দিনই চেয়ারম্যান কালুসহ ০৭ (সাত) জনরে বিরুদ্ধে মামলা করনে। পরে ঐদিন রাতইে পুলিশ অভিযান চালিয়ে চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালুকে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের দাবী চেয়ারম্যান কালু এর আগেও অনেককেই তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে মারধর করেছে। চেয়ারম্যান কালু’কে তাৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার ও জামিন না মঞ্জুরে খুশি হয়েছে এলাকাবাসী। এলাকাবাসী এ জঘন্য অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানায়।
আহত শিক্ষক মো. জাফর বরকত নাটোরের খবরকে বলেন, তিনি ওই মাদ্রাসায় ২৫ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। সম্প্রতি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি পরিবর্তন করার জন্য চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান অধ্যক্ষকে চাপ দিয়ে আসছিলেন। একই উদ্দেশ্যে তিনি তাঁর সহযোগীদের নিয়ে সকালে মাদ্রাসায় যান। অধ্যক্ষকে না পেয়ে তিনি অধ্যক্ষ ও পরিচালনা কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করছিলেন। বিরক্ত হয়ে তিনি গালি দিতে নিষেধ করেন। এতে তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে ইউপি ভবনে আটকে রাখেন। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাহাবুবুর রহমান শরিফ বলেন, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির নতুন সভাপতি হওয়ার পর থেকেই চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালুর সমর্থকরা কমিটি ভেঙে দিতে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে আসছেন। রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে খুঁজতে এসে না পেয়ে ইংরেজি শিক্ষক জাফর বরকতকে পিটিয়েছে। আমি এই হামলার বিচার চাই।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুম বলেন, ‘নাটোর-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম আমাকে এই মাদ্রাসার সভাপতি করেছেন। সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগে পরিবর্তন আসার পর তাঁর প্রতিপক্ষরা চেয়ারম্যান নুরুজ্জামানকে এখানে সভাপতি করার তৎপরতা চালাচ্ছিলেন। এর অংশ হিসেবেই আজ মাদ্রাসায় গিয়ে একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে মারধর করেছে। পুলিশ সুপার নিজে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে হয়তো ওই শিক্ষক মারাই যেতেন।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়। আমি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়েছি। মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের যেখান থেকেই হোক গ্রেপ্তার করা হবে। কেউ ছাড় পাবে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *