নাটোরে মাদক মামলায় দণ্ডিত, গ্রেপ্তারের ২৩ দিন পরই সন্তান প্রসব

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
গ্রেপ্তারের ২৩ দিন পর নাটোর কারাগারে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন মাদক মামলায় দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত এক আসামি। গত সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাঁর প্রসবব্যথা শুরু হলে তাঁকে নাটোর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন আসামি নুরজাহান বেগম (৪২)। জানা যায়, নাটোরের সিংড়া উপজেলার কালিগঞ্জ বড়বাড়ি গ্রামের মাসুদ রানার স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৪২) কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী থানার মাদক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি কুড়িগ্রাম কারাগারে ছিলেন। জামিনের পর হাজিরা না দেওয়ায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে শ্বশুরবাড়ি এলাকা নাটোর জেলার সিংড়া থানা-পুলিশ নুরজাহান বেগমকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। তবে তাঁর সাজার পরোয়ানা এখনো নাটোর কারাগারে আসেনি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাটোর কারাগারের জেলার মো. আবু তালেব বলেন, ‘আসামি নুরজাহান বেগম এর আগে কুড়িগ্রাম কারাগারে ছিলেন। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান। আদালত হাজিরা দেওয়ার শর্তে জামিন দিলেও তিনি আর আদালতে হাজিরা দেননি। এ সময়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হন। পরে আদালত তাঁর জামিন বাতিল করলে গত ২৭ আগস্ট নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় পুনরায় কারাগারে আসেন। পরে কুড়িগ্রাম কারাগারের মাধ্যমে সেখানকার আদালতে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, মাদক মামলায় তাঁর দুই বছরের জেল হয়েছে। কুড়িগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ নুরজাহান বেগমকে সেখানে পাঠাতে বলে। এ সময় শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নুরজাহানকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁর চিকিৎসাপত্রে ভ্রমণের জন্য অনুপযুক্ত বলে মন্তব্য লেখেন। সে কারণে তাঁকে কুড়িগ্রামে পাঠানো যায়নি।’ নাটোর কারাগারের জেলার আরও বলেন, ‘গত সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাঁর প্রসব ব্যথা দেখা দেয়। নাটোর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে স্বাভাবিকভাবে একটি ছেলে সন্তান প্রসব করেন। বর্তমানে মা ও ছেলে দুজনেই সুস্থ আছেন। শিশুর এখনো নাম রাখা হয়নি। জেলখানার অভিভাবক হিসেবে আমরাই এই নবজাতকের নাম রাখতে চাই।’ এ দিকে নবজাতকের জন্য উপহার সামগ্রী পাঠিয়েছেন নাটোর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামীম আহমেদ ও কারা কর্তৃপক্ষ। জেলার আবু তালেব বলেন, বিষয়টি জেল কর্তৃপক্ষ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামীম আহমেদকে জানালে তিনি নবজাতকের জন্য পোশাক এবং কসমেটিক জাতীয় সুরক্ষা সামগ্রী কারাগারে পাঠিয়েছেন। জেল কর্তৃপক্ষের সুপারও বিভিন্ন সামগ্রী দিয়েছেন। নাটোর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামীম আহমেদ বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে নবজাতকের মা যদি অপরাধীও হয়, তবু যে শিশু আজ পৃথিবীর আলো দেখল, তার কোনো অপরাধ নেই। তাদের পাশে দাঁড়ানোরও কেউ নেই। বাড়িতে জন্ম নিলে তো তাদের অনেক মানুষ শুভ কামনা জানাতো, উপহার নিয়ে আসত। তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সাধ্যমতো উপহার পাঠিয়েছি। কারাগার শুধু বন্দিশালা নয়, এটি সংশোধনাগারও—সেটাই আমরা বিশ্বাস করি।’ এ দিকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের এমন পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের নাটোর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন। কমিশনের নাটোর জেলা কমিটি ওই শিশুকে কারাগারে দেখতে যাবে এবং আইনগত সহযোগিতার পাশাপাশি সাধ্যমতো আর্থিক সহায়তারও আশ্বাস দিয়েছেন আনোয়ার হোসেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *