জমি বিক্রি
বৃদ্ধাশ্রমের জন্য জায়গা কিনতে রফিকুলকে তাঁর ময়মনসিংহ শহরের শম্ভুগঞ্জ এলাকায় থাকা ২ শতাংশ জমি বিক্রি করতে হয়। বৃদ্ধাশ্রমের ঘর নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক প্রয়োজনে রফিকুল আরও ২০ শতাংশ জমি বিক্রি করেন।ফিকুল বলেন, তিনি জানতেন যে বৃদ্ধাশ্রম গড়তে, চালাতে টাকা লাগবে। কিন্তু তাঁর তেমন টাকা-পয়সা নেই। তা সত্ত্বেও সাহস করে কাজটা তিনি শুরু করেন। সে জন্য তাঁকে জমি বিক্রি করতে হয়।রফিকুলের স্ত্রী কল্পনা বলেন, গ্রামবাসীসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ তাঁদের বৃদ্ধাশ্রমে খাবার দেন। অর্থ হায়তা দেন। তা দিয়ে বৃদ্ধাশ্রম চলে। তবে মাঝেমধ্যে তাঁরা সংকটে পড়ে যান।
ছেড়েছেন চাকরি
বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে গীতা রানী, এলাচি বেগম, ফুলবানু, হোসনা বেগম ও রোকেয়া বেগম হাঁটতে পারেন না। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ হাসপাতালের সামনে পড়ে ছিলেন। কেউ পড়ে ছিলেন বাজারে। তাঁদের সব সময় দেখাশোনা ও সেবাযত্নের প্রয়োজন হয়। এ কাজে পূর্ণ সময় দিতে রফিকুল বছরখানেক আগে হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীর চাকরিটি ছেড়ে দেন। এখন তিনি সার্বক্ষণিক এসব মানুষের সেবা-শুশ্রূষা করছেন।রফিকুল বলেন, ‘আমি তাঁদের কাছে গেলে তাঁরা আমায় বাবা বাবা বলে ডাকে। আমিও তাঁদের বাবা বা মা বলে ডাকি। তাঁরাই আমার মা-বাবা।’বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পাওয়া নারী-পুরুষদের দেখাশোনার কাজ রফিকুলের স্ত্রীও করেন। তাঁদের সঙ্গে আছেন ফাহিমা আক্তার ও সোহেল মিয়া নামের দুজন।রফিকুলের সাবেক সহকর্মী সোহেল। রফিকুলের উদ্যোগটি ভালো লাগায় তিনি এ কাজে যুক্ত হয়েছেন। আর ফাহিমা স্থানীয়অধিবাসী।বৃদ্ধাশ্রমে একজন বেতনভুক্ত রাঁধুনি আছেন। তাঁকে মাসে ২ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হয়।
মহৎ উদ্যোগ
চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি মাতৃছায়া সমাজকল্যাণ সংস্থা ও বৃদ্ধ আশ্রয় কেন্দ্রে একটি ঘর তুলে দিয়েছে সেবা সংগঠন ‘এপেক্স ক্লাব অব ময়মনসিংহ’।দুই রুমবিশিষ্ট ৪২ ফুটের এই ঘরে অন্তত ১৫ জন থাকতে পারেন। এ ছাড়া খাবারের জিনিসপত্র রাখা ও নামাজের জন্য আলাদা ঘর করা হয়েছে।ময়মনসিংহ জেলা এপেক্স ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক আশিকুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, রফিকুল প্রথম যখন উদ্যোগটির কথা বলেছেন, তখন তাঁর বিশ্বাস হয়নি। নিজ চোখে দেখার পর তাঁকে সহযোগিতার চেষ্টা করছেন তিনি।আশিকুর বলেন, ‘রফিকুল একটা ভালো কাজ করছেন। সমাজে তাঁর মতো মানুষ আরও দরকার।’বীর বেতাগৈর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আব্দুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, রফিকুলের উদ্যোগটি মহৎ। তাঁরাও রফিকুলকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করছেন।