শুক্রবার, ডিসেম্বর ৮, ২০২৩
spot_img
Homeঅন্যান্যছড়িয়ে পড়া মাঙ্কিপক্স কতটা উদ্বেগের

ছড়িয়ে পড়া মাঙ্কিপক্স কতটা উদ্বেগের

আমাদের থেকে কত দূরে?

যখন মাত্র করোনা সংক্রমণের চাপ থেকে বেরিয়ে মানুষজনের মধ্যে একধরনের স্বস্তির ছাপ পড়তে শুরু করেছে, তখনই খবর আসছে মাঙ্কিপক্সের। (যদিও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি বিবেচনায় বাংলাদেশ ভ্রমণের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র)। তবে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে মাঙ্কিপক্স কোভিডের মতো নয় এবং শিগগিরই এর কারণে লকডাউন ঘোষণার মতো ঘটনা ঘটবে না। তাই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকার মতো অবস্থায় কেউ নেই। গত মাসে ঢাকা বিমানবন্দরে একজন তুর্কি পর্যটককে সন্দেহ করে হাসপাতালে নেওয়ার পরে বোঝা গিয়েছিল তিনি মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত নন। বাংলাদেশ এখনো এই রোগমুক্ত, কিন্তু চিন্তামুক্ত নয়। বাড়ির কাছে পৌঁছে যাওয়ায় এই চিন্তা বাড়ছে। এর মধ্যেই প্রতিবেশী দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত একাধিক রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত কেরালা রাজ্যের বাইরে মাঙ্কিপক্সের তেমন হদিস মেলেনি। বলে রাখা ভালো কেরালা দিয়েই করোনা ঢুকেছিল ভারতে। এই রাজ্যের অনেক মানুষ প্রবাসে থাকে। বিদেশি পর্যটকদের যথেষ্ট আকর্ষণ আছে কেরালার প্রতি। লাগোয়া রাজ্য তামিলনাড়ুতে এখন ঢাকা থেকে সরাসরি যাওয়া যায়। কলকাতার পরেই ভারতে আমাদের দ্বিতীয় প্রধান গন্তব্য চেন্নাই। সেটাও একটা চিন্তার বিষয়। পশ্চিমবঙ্গে সন্দেহের বশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। যে যুবকের শরীরে ওই রোগের লক্ষণ দেখে দিয়েছিল তাঁর নমুনা পরীক্ষায় জানা গেছে তাঁর শরীরের গোটাগুলো নিতান্তই খোসপাঁচড়া। তবে কলকাতা বিমানবন্দর মাঙ্কিপক্সের ওপর নজরদারি শুরু করেছে। দুবাই, দোহা, সিঙ্গাপুর আর ব্যাংকক থেকে সরাসরি যাঁরা দমদমে নামছেন, তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি তারা যাত্রীদেরও সচেতন করছে। ভারত ছাড়াও বাংলাদেশে মাঙ্কিপক্স অনুপ্রবেশের আরও অনেক পথ আছে। ইউরোপ আর উত্তর আমেরিকার যেসব দেশে এখন মাঙ্কিপক্সের আতঙ্ক বিরাজ করছে, সেসব দেশেও আমাদের অনেক দেশি ভাই-বোন থাকেন। তাঁদের আসা-যাওয়া আছে। উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডা মাঙ্কিপক্স নিয়ে বেশ পেরেশানির মধ্যে আছে। সে দেশের প্রায় সব বড় শহরে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। দ্য পাবলিক হেলথ এজেন্সি অব কানাডা জানাচ্ছে, ২৯ জুলাই পর্যন্ত মোট ৮০৩ জনের শরীরে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে অন্টারিওতে ৩৬৭ জন আর কুইবেকে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫৯ জন। কানাডার এই দুই প্রদেশে প্রবাসী বাংলাদেশি আর শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। শীতে-গরমে তাঁরা দেশে আসেন। দেশ থেকে আত্মীয়স্বজন তাঁদের দেখতে যান। ফলে আক্রান্ত দেশের দূরত্ব যা-ই হোক তারা আমাদের কাছেই আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের মতে পৃথিবীর অন্য শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে মাঙ্কিপক্স।

ছড়াচ্ছে কীভাবে

মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ঘেমে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশির টান ও অবসাদ। জ্বর কমলে শরীরে দেখা দেয় ফুসকুড়ি। অধিকাংশ ঘটনায় শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। পরে অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে; বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাঙ্কিপক্স বিশেষজ্ঞ লুইস বলেছেন, আফ্রিকা মহাদেশের বাইরে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের শতকরা ৯৯ জন পুরুষ। তাঁদের মধ্যে শতকরা ৯৫ জন শুধু পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সমকামী ও উভকামী পুরুষদের সতর্ক হতে বলেছে। লুইসের কথাই শেষ কথা নয়। সমকামী ও উভকামী কম বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে মাঙ্কিপক্স কেন বেশি পাওয়া যাচ্ছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। কার মাধ্যমে কীভাবে ছড়াচ্ছে, এ বিষয়ে চিত্র এখনো পরিষ্কার নয়। বরং সংক্রমণের ঘটনাগুলো সম্পর্কিত নয় মনে হচ্ছে। হতে পারে সমকামীরা নিজেদের যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কে অন্যদের থেকে বেশি সচেতন, তাই তাঁরাই চিকিৎসকের কাছে আসছেন। এই রোগ অন্য আরও অনেকভাবে ছড়াতে পারে, ছড়াচ্ছে। মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত মানুষের তোয়ালে ব্যবহার করে দুটি শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। যুক্তরাজ্যে সম্প্রতি সংক্রমণের যেসব ঘটনা শনাক্ত হয়েছে, সেগুলোর একটির সঙ্গে অপরটির কোনো যোগসূত্র এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংক্রমণ ঘটেছে যুক্তরাজ্যের ভেতরই। সেখানে একজন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি মাঙ্কিপক্স রোগীকে সেবা দিয়েছিলেন। প্রমাণসহ পরিষ্কার যোগসূত্র নিশ্চিত না হয়ে এটা শুধুই সমকামীদের সমস্যা বলে প্রচার চালালে মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে অভিযান সফল না-ও হতে পারে। সমকামী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ভয়ে মানুষ রোগটি লুকাবে।

মাঙ্কিপক্সের জন্য বানরসমাজ আর উষ্ণমণ্ডলীয় দেশগুলো কতটা দায়ী

নাম শুনে বানরের কথা মনে হলেও আসলে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি পাওয়া যায় ইঁদুরের শরীরে। ইঁদুরসহ রডেন্ট প্রজাতির প্রাণীর মাধ্যমে এই ভাইরাস মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ার আলামত অনেক আগেই বিজ্ঞানীরা পেয়েছিলেন। তবু বানরদের নাম যুক্ত করা হয়েছে। কাজেই বানরের প্রতি ঢিল ছোড়ার আগে আমাদের বিষয়টি বুঝতে হবে। গরিব করে রাখা দেশগুলোর ঘাড়ে রোগ আর অসুখ-বিসুখের দায় চাপানোর উপনিবেশিক সংস্কৃতি বড় দেশগুলোর অনেক দিনের। যেমন বেনিয়াদের জাহাজে চড়ে আসা কলেরার নাম দিয়েছিল যশোর কলেরা। এবার বিজ্ঞানীরা এই উপনিবেশিক মানসিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তাঁরা এই নাম নিয়েও আপত্তি তুলেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, মাঙ্কিপক্স ভাইরাস এবং তার ধরনগুলোর নামে কোথাও না কোথাও বর্ণভেদ প্রকট হয়ে উঠছে। এই রোগের নামের সঙ্গে বিশেষ একটি মহাদেশের নাম জুড়ে গেছে। এতে সেই মহাদেশের দেশগুলো অকারণে কলঙ্কিতও হচ্ছে। ওই বিজ্ঞানীরা আবেদন করেছিলেন এই প্রবণতা বন্ধ হওয়া দরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিষয়টি আমলে নিয়েছে। নাম বদলানোর ব্যাপারে খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাই উদ্যোগী হয়েছে।

আমাদের সাবধান আর সতর্ক থাকতে হবে। সাধারণ মানুষকে সঠিক তথ্য দিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে আমাদের প্রস্তুতিকে হালনাগাদ রাখতে হবে। বিমানবন্দর আর স্থলবন্দরগুলোয় নজরদারি ও পরীক্ষার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ থেকে শিশুদের দূরে রাখার জন্য আমরা এই পদক্ষেপগুলো নিতে পারি:

  • শিশু যেন হাত না ধুয়ে খেয়ে না নেয়। স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
  • রাস্তার বিড়াল, কুকুর দেখলেই শিশুরা তাদের ছোঁয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এসব প্রাণী থেকে যেহেতু এই রোগ ছড়াতে পারে, তাই শিশুদের এ ধরনের কাজ থেকে বিরত রাখা।
  • ফুসকুড়ি আছে এমন ব্যক্তির সংস্পর্শে শিশুকে আসতে না দেওয়াই ভালো।
  • অনেক দিন ধরে জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগছেন এমন ব্যক্তির কাছ থেকেও শিশুকে দূরে রাখা।
সম্পরকিত প্রবন্ধ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

সর্বাধিক পঠিত

সাম্প্রতিক মন্তব্য