এগিয়ে চলছে বরিশালের জাহাজ নির্মাণ শিল্প নির্মিত হচ্ছে অত্যাধুনিক নৌযান

বরিশালে জাহাজ নির্মাণ শিল্প এগিয়ে চলছে। নির্মাণ করা হচ্ছে—অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিলাসবহুল যাত্রীবাহী লঞ্চ, কার্গো জাহাজ, কোস্টার ও অয়েল ট্যাংকার। জাহাজ নির্মাণ শিল্পে কাজ করে জীবনজীবিকা নির্বাহ করছেন দেড় সহস্রাধিক শ্রমিক। অনুসন্ধানে জানা যায়, বরিশাল নদীবহুল এলাকা হলেও এখানে নৌযান নির্মাণ করা হতো না। নৌযান তৈরি করে আনা হতো খুলনা, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম কিংবা মোংলা থেকে। পণ্য কিংবা জ্বালানিবাহী জাহাজও নির্মিত হতো ঢাকা ও খুলনায়। ১৯৬৪ সালে সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের নয়ানী এলাকায় সাহেবের হাটখালের পাশে ছোট পরিসরে একটি ডকইয়ার্ড তৈরি করেন বিশিষ্ট লঞ্চ ব্যবসায়ী সাবেক পৌর চেয়ারম্যান প্রয়াত গোলাম মাওলা। সেখানে চারটি কাঠের লঞ্চ নির্মাণের মধ্য দিয়ে নৌযান নির্মাণে বরিশালের পথচলা শুরু হয়। ঐ ডকইয়ার্ডে ছোট লঞ্চ ও নৌযান তৈরিতে টানা তিন দশকে ব্যাপক সাফল্য পায়। এরপর তিনি আরো বড় পরিসরে কীর্তনখোলা নদীর পশ্চিম তীরে নগরীর বেলতলা এলাকায় বিশাল জায়গা নিয়ে সুরভী শিপইয়ার্ড গড়ে তোলেন। সেখানে দেড় বছর ধরে নির্মাণ করা আধুনিক সুযোগসুবিধাসংবলিত প্রথম জাহাজটি ২০০০ সালে পানিতে ভাসাতে সক্ষম হন। এমভি সুরভী-৪ নামের দ্রুতগামী এ লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল রুটের যাত্রীদের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। গোলাম মাওলার জ্যেষ্ঠ পুত্র সুরভী গ্রুপ অব কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজ উল কবির ইত্তেফাককে জানান, কোম্পানির সবগুলো যাত্রী, পণ্য ও জ্বালানি পরিবহনের জাহাজ নিজস্ব শিপইয়ার্ডে নির্মিত হয়েছে। সুরভীর পাশেই কীর্তনখোলা নদীর তীর ঘেঁষে সুন্দরবন শিপইয়ার্ড গড়ে তুলেছেন বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও লঞ্চমালিক সমিতির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু। ঢাকা-বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে নিজের মালিকানাধীন অত্যাধুনিক যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি সুন্দরবন-৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নির্মাণ করা হয়েছে এ শিপইয়ার্ডে। সাইদুর রহমান রিন্টু ইত্তেফাককে জানান, যাত্রীবাহী লঞ্চের পাশাপাশি এখানে পণ্যবাহী কোস্টার ও অয়েল ট্যাংকার নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সুন্দরবন শিপইয়ার্ডে চুক্তিতে নির্মাণ করা হয়েছে একাধিক লঞ্চ ও পণ্যবাহী কোস্টার ও অয়েল ট্যাংকার। তিনি আরও জানান, এখানকার শিপইয়ার্ডে বিশ্বমানের নৌযান তৈরি করা সম্ভব। সুরভী ও সুন্দরবন শিপইয়ার্ডের পাশেই কীর্তনখোলা কোম্পানির নৌযান তৈরির মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল কীর্তনখোলা শিপইয়ার্ডের। এমভি কীর্তনখোলা-১, ২ ও ১০ লঞ্চ নির্মিত হয়েছে এই শিপইয়ার্ডে। মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌসের মালিকানাধীন ঐ শিপইয়ার্ডে ও নির্মিত হয়েছে একাধিক নৌযান। মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস বলেন, বরিশালে এখন অনেক দক্ষ কারিগর তৈরি হয়েছে। তাদের হাতে বিশ্বমানের জাহাজ তৈরি সম্ভব। কীর্তনখোলার পশ্চিম তীরে যখন দিনরাত জাহাজ নির্মাণের এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সাফল্য এনেছে তখন পূর্ব তীরে অ্যাডভেঞ্চার নামে শিপইয়ার্ড গড়ে তোলেন বরিশাল মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নিজাম উদ্দিন। তার শিপইয়ার্ডে অ্যাডভেঞ্চার-৪ ও ৫ নামের দুটি ওয়াটার ওয়েজ ও অ্যাডভেঞ্চার-৬, ১ ও বিলাসবহুল অ্যাডভেঞ্চার-৯ নির্মিত হয়েছে। এম খান শিপইয়ার্ড রয়েছে সাবেক দপদপিয়া ফেরিঘাটসংলগ্ন এলাকায়। এছাড়া কেডিসিসংলগ্ন চাঁদমারী এলাকায়ও ছোট ছোট পণ্যবাহী ট্রলার ও কোস্টার নির্মাণের ডকইয়ার্ড রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *