অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত নিহত সোহেলের

সিংড়া প্রতিনিধি:
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) গাড়ির ধাক্কায় সাংবাদিক সোহেল আহমেদ জীবন (৩৩) নিহত হওয়ার পর থমকে গেছে পুরো পরিবারটি। একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিহত সাংবাদিকের স্ত্রী জনি আক্তার (২৮)। স্বামীর রেখে যাওয়া সংসারে দুই সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে সিয়াম হোসেন (১০) স্থানীয় একটি হাফেজিয়া মাদরাসায় পড়ালেখা করে আর ছোট মেয়ে সামিয়া খাতুন (৪) । তাদের নিয়ে কিভাবে চলবে সংসার আর দুই ছেলে-মেয়ের ভবিষৎ নিয়ে বনায় রয়েছেন মা জনি আক্তার। অপরদিকে এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক ৩ সদস্য কমিটি গঠন করেছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা খাতুনকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিআরটিএর সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রাশেদুজ্জামান এবং সিংড়ার ইউএনও সামিরুল ইসলাম। কমিটিকে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা
দিতে বলা হয়েছে। সোমবার (৯ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার বালুয়া বাসুয়া গ্রামের বাড়িতে নিহত সাংবাদিক সোহেল রানা জীবনের মরদেহ নেওয়া হয়। বাবার লাশের পাশে নির্বাক দৃষ্টিতে বসেছিল দুই সন্তান সিয়াম ও সামিয়া। এসময় তাঁর পরিবার কে স্বান্তনা দেন সিংড়া পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব মোঃ জান্নাতুল ফেরদৌস ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এমএম সামিরুল ইসলাম। এসময় তাঁর পরিবারে চাকুরির জন্য আশ্বাস দেন। সাংবাদিক সোহেল আহমেদ জীবন সিংড়া উপজেলার বালুয়া বাসুয়া এলাকার মৃত আ. জলিলের ছেলে। তিনি বন্দর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ছিলেন। তিনি স্থানীয় দুরন্ত সংবাদ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করতেন। এদিকে সহকর্মী নিহত হওয়ায় বন্দর স্কুল এন্ড কলেজে তিনদিনের শোক ঘোষনা করা হয়েছে। নিহত সাংবাদিকের স্ত্রী জনি আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বৃদ্ধ শাশুড়িসহ পাঁচ সদস্যের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আমার স্বামী। এখন আমার ছোট দুই ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ কি হবে, আমাদের পরিবারের দায়িত্ব কে নিবে?’ জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে। কেন সেখানে সরকারি গাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল? চালক কে ছিল? সে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিল কি না? তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, গত সোমবার (৯ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী
অফিসারের স্ত্রীকে সিংড়া গোল-ই আফরোজ সরকারি কলেজে পৌঁছে দিতে সরকারি গাড়িটি (নাটোর-ঘ ১১-০০৩২) সিংড়া আসে। এসময় সিংড়া উপজেলা থেকে মোটরসাইকেলে সাংবাদিক সোহেল আহমেদ জীবন কর্মস্থল বন্দর স্কুল অ্যান্ড কলেজে
যাচ্ছিলেন। নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের নিংগইন পেট্রোল পাম্প এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ইউএনওর গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে সোমবার দুপুর ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *